প্রেস বিবৃতি: সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে ২ জন শ্রমিক হত্যার তীব্র নিন্দা এবং রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার প্রতিবাদ

সম্প্রতি ফরিদপুরে মন্দিরের প্রতিমায় আগুন দেয়ার অভিযোগ তুলে ‘উত্তেজিত জনতা’র নামে একদল মানুষ মন্দির পার্শ্ববর্তী নির্মাণাধীন স্কুল ভবনের শ্রমিকদের উপর হামলা করে তাদের দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে এবং আরও ৩-৪ জনকে আহত করেছে। সাধারণ কর্মজীবী শ্রমিকদের উপর এহেন জঘন্য সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
এ ধরনের পিটিয়ে মারার ঘটনা স্পষ্টতই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিকে নির্দেশ করে। যখন খোদ ক্ষমতাসীন সরকারই নানাভাবে বিচারবহির্ভূত সহিংসতার চর্চা করে থাকে, তার আবশ্যিক প্রভাব জনসমাজেও তৈরি হয়। ফরিদপুরের ঘটনা উত্তেজিত জনতা কর্তৃক তেমনই একটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। ইতিপূর্বে দেশে বহুবার ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা এবং মন্দিরে হামলার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। সেসময় পুলিশের ভূমিকা ও প্রত্যক্ষ মদদই ওইসব ঘটনা উস্কে দিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতাও ছিল স্পষ্ট। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ‘অনুভূতির’ ধোঁয়া তুলে বারবারই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বসত ভিটায় হামলা লুটপাটের ঘটনা এই সরকার অতীতে নানাভাবে ঘটিয়েছে। এতে করে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসত-ভিটা দখল এবং ব্যবসা বাণিজ্য লুটপাট করতে পেরছে সরকার দলীয় দলের লোকজন।
এবার তার উল্টো ঘটনা ঘটেছে ফরিদপুরে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মানুভূতিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে খেটে খাওয়া শ্রমিকদের উপর হামলা চালিয়ে হত্যার মতো জঘন্য ঘটনা ঘটেছে।
আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের— তা সে যেই সম্প্রদায়েরই হোক না কেন— জান-মালের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্র-সরকারের। নিরাপত্তা দেয়ার জন্যই তাদের পেছনে বছরে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ট্যাক্স খরচ করে এদেশের মানুষ। তাই রাষ্ট্র-সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, হামলাকারীদের সনাক্তপূর্বক আইনের আওতায় আনা এবং শাস্তির ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি মন্দিরে আগুন লাগানোর সাথে জড়িতদেরও খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু ফরিদপুরসহ অন্যান্য ঘটনায় বরাবরই রাষ্ট্র-সরকার নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। কোনো ঘটনার ক্ষেত্রেই দোষীদের চিহ্নিত করা হয়নি এবং বিচার করা হয়নি। উল্টো হিন্দু সমাজের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে তাদের ত্রাতা সাজার চেষ্টা করেছে আওয়ামীলীগ সরকার। শুধু তাই নয়, প্রায় প্রত্যেকটি ঘটনায় সরকার-প্রশাসনের পরিকল্পিত নিষ্ক্রিয়তা লক্ষ করা গেছে। সরকারের এই পরিকল্পিত নিষ্ক্রিয়তার ফলেই এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনাগুলো ঘটতে পারছে।
আমরা এই বিবৃতির মাধ্যমে রাষ্ট্র-সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে হামলাকারীদের সনাক্তপূর্বক আইনের আওতায় আনা হোক এবং আদালতের মাধ্যমে যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়ায় তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। পাশাপাশি বাংলাদেশের সকল গণতন্ত্রমনা মানুষের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি, আসুন বিজেপি ও তাদের দোসরদের ঘৃণ্য ‘সাম্প্রদায়িক চক্রান্ত’ ভেস্তে দেই এবং এই রাষ্ট্রের জবাবদিহিতাহীন ক্ষমতাকাঠামো সংস্কার করে বাংলাদেশকে একটি উদার, গণতান্ত্রিক, পরমতসহিষ্ণু ও বহুত্ববাদী দেশ হিসেবে গড়ে তুলি। বিজেপি ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বাংলাদেশকে ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতা’র দেশ হিসেবে প্রচার করে ফায়দা লোটার দুরভিসন্ধিমূলক রাজনৈতিক কুমতলব ভেস্তে দেই। দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক উষ্কানি তৈরির মাধ্যমে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি।
বার্তা প্রেরক
সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন
মিডিয়া ও প্রচার সমন্বয়ক
জাতীয় নির্বাহী কমিটি
যোগাযোগ: 01755-557220
 সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে ২ জন শ্রমিক হত্যার তীব্র নিন্দা এবং রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার প্রতিবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *