বৈপ্লবিক প্রক্রিয়া নয়, আমরা বলছি সংস্কারের কথা

বৈপ্লবিক প্রক্রিয়া নয়, আমরা বলছি সংস্কারের কথাসাক্ষাৎকার: অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম প্রধান নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ূম রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক। হাওরের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে বহুবার কারা নির্যাতিত হাসনাত কাইয়ূম বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাকালীন সহসভাপতি এবং বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তাঁর জন্ম ১৯৬৩ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার শোভারামপুর গ্রামে।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: সাইফুর রহমান তপন

সমকাল: রাষ্ট্র সংস্কার বলতে আপনারা কী বোঝাচ্ছেন- একটু সংক্ষেপে বলুন।

হাসনাত কাইয়ূম: আমরা দু’ভাবে বিষয়টি বলতে পারি। একটি হচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধানের প্রথম অংশে ‘রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি’ নামে যে অধ্যায়টি আছে- সেখানে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ- অর্থাৎ সাধারণ মানুষের কাছে যেগুলো চার মূলনীতি বলে পরিচিত; এর পাশাপাশি আরও অনেক বিষয় বা নীতি আছে। বাংলাদেশের সংবিধানের সমস্যা হচ্ছে, এ মূলনীতিগুলো বাস্তবায়নে যে ধরনের ক্ষমতা কাঠামো থাকা দরকার; রাষ্ট্রের ক্ষমতা যেভাবে বিন্যস্ত হওয়া দরকার, তা ওইভাবে না হয়ে ব্রিটিশ আমলে যেমনটা ছিল; পাকিস্তান আমলে যেমন ছিল তার চেয়েও খারাপভাবে বিধিবদ্ধ আছে। আমরা বলছি, সংবিধানের ‘রাষ্ট্র্র পরিচালনার মূলনীতি’ অংশের সঙ্গে ক্ষমতা কাঠামো অংশের যে দ্বন্দ্ব বা বৈপরীত্য আছে, তা দূর করতে সাংবিধানিক ক্ষমতা কাঠামোর পরিবর্তন বা সংস্কার করতে হবে। এ ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য আরও অনেক আইনকানুন আছে। সেগুলোকেও মূলনীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করার জন্য সংস্কার করতে হবে। এই পুরো কাজকে আমরা বলি রাষ্ট্র সংস্কার।

সমকাল: অন্য কীভাবে বিষয়টি বলতে পারেন?

হাসনাত কাইয়ূম: অন্যভাবে কিছু বিষয় সুনির্দিষ্ট করার জন্য আমরা বলি; ‘নির্বাচন ব্যবস্থা’ সংস্কার করতে হবে। সংসদে যেহেতু অন্যায্য আইন তৈরি হয়; তাই সংসদ বা আইন বিভাগকে সংস্কার করতে হবে। আইন প্রয়োগ ও কার্যকরের মাধ্যম হলো বিচার বিভাগ। সেখানে সংস্কার লাগবে। আমাদের প্রশাসন ঔপনিবেশিক আমলের; সেখানে সংস্কার লাগবে। আর সংবিধানে ‘স্থানীয় সরকার’ নাই; আছে ‘স্থানীয় শাসন’। সেখানেও সংস্কার লাগবে। আমাদের সংবিধানে ‘মৌলিক অধিকার’ বলে একটা অধ্যায় আছে, যেখানে সভা-সমাবেশ করার অধিকার; মতপ্রকাশের অধিকার ইত্যাদি সম্পর্কে বলা আছে। তবে এর প্রায় সবই শর্তসাপেক্ষে; তাই সেগুলো বদলাতে হবে। শর্তগুলো ব্রিটিশ আমলের আইনের বরাতে দেওয়া। আমরা মৌলিক অধিকারকে সেসব ঔপনিবেশিক আইনের শর্তের বাইরে আনতে ও নিরঙ্কুশ করতে চাই। আমাদের যে পাচারকেন্দ্রিক বা পাচারমুখী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানেও সংস্কার করতে হবে। মূলত এ সাতটা জায়গায় সংস্কার করা গেলে শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থানসহ জীবনযাপনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে দুর্ভোগ আছে, তা কমানো যাবে বলে মনে করি। এই পুরো বিষয়কে আমরা আরেকভাবে বলি রাষ্ট্র সংস্কার।

সমকাল: আপনি রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ- নির্বাহী, বিচার ও আইন বিভাগ সংস্কারের কথা বললেন। কোনটার ক্ষেত্রে কী সংস্কার লাগবে বলে মনে করেন?

হাসনাত কাইয়ূম: প্রথমত ‘সেপারেশন অব পাওয়ার’ বা ক্ষমতার ভারসাম্য এবং রাষ্ট্র ও সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। যেমন সংসদের কাছে সরকারের জবাবদিহি করার কথা। কিন্তু ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সংসদ উল্টো জিম্মি হয়ে আছে সরকারের কাছে। আমরা মনে করি, ‘আস্থা ভোট’ ছাড়া আর সর্বক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের জনপ্রতিনিধি হতে হবে; এরা এখন দলীয়, প্রকৃতপক্ষে দলীয় প্রধানের প্রতিনিধি হয়ে আছেন। সংসদের ‘কার্যপ্রণালি বিধি’ও সংস্কার করতে হবে। নির্বাহী বিভাগ এখন পিরামিড স্টাইলের; এখন তা শুধু নিচ থেকে ওপরের দিকে সর্বশীর্ষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জবাবদিহি করে। একে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক করতে হবে। আমাদের বিচার ব্যবস্থা ঔপনিবেশিক। এই ঔপনিবেশিক আইনকানুন অক্ষুণ্ণ রেখে বিচার বিভাগকে স্বাধীন করলেও লাভ হবে না। আইন যাতে মানুষকে মর্যাদা দেয় সে জন্য আইনের যেমন পরিবর্তন লাগবে, তেমনি বিচার বিভাগেরও স্বাধীনতা লাগবে।

সমকাল: সংবিধানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় কিছু শর্ত দেওয়া আছে, যেগুলোকে এক কথায় জাতীয় স্বার্থের রক্ষাকবচ বলা হয়। এগুলোকে তুলে দিতে চান আপনারা?

হাসনাত কাইয়ূম: দেখুন, আমি যদি মতপ্রকাশ করতে গিয়ে কোনো অপরাধ করি তার বিচারের জন্য ব্যবস্থা থাকতে পারে। সংবিধানে তা শর্ত হিসেবে লিখে রেখে আগে থেকেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির দরকার নেই। আমার মতপ্রকাশের অধিকার হতে হবে অবাধ, নিরঙ্কুশ। এই অধিকারের চর্চা করতে গিয়ে যদি আমি কোনোভাবে আপনার অবাধ অধিকার খর্ব করি, তার জন্য যে শাস্তি আমার পাওয়ার কথা, তা পেতে হবে। কিন্তু আপনি যখন বলবেন- অমুক অধিকার তমুক আইনের শর্ত সাপেক্ষে ভোগ করা যাবে এবং তমুক আইনটা যদি হয় ব্রিটিশ বা পাকিস্তানি শাসকদের শাসনের স্বার্থে বানানো কোনো আইন, তখন আপনি স্বাধীন দেশের একজন নাগরিকের অধিকারকে ঔপনিবেশিক আইনের মাধ্যমে বন্দি করে ফেলেন। এর মাধ্যমে অধিকারচর্চার চিন্তাকেও বারিত করা হয়। এটা সভ্যতাবিরোধী।

সমকাল: এ কর্মসূচি কোন প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়ন করবেন? সেটা কি বিপ্লবের মাধ্যমে, না অন্যভাবে?

হাসনাত কাইয়ূম: না; আমরা কোনো বৈপ্লবিক প্রক্রিয়ার কথা ভাবছি না। তবে যাঁরা নতুন সংবিধানের কথা ভাবেন, তাঁরা বিপ্লবের কথা বলতে পারেন। আমরা বলছি সংস্কারের কথা। একটা সংবিধানের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো তার মূলনীতি। মুক্তিযুদ্ধের একটা গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হলো আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সংবিধানের মূলনীতি ঠিক করতে পেরেছি। সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার থেকে ‘রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি’ অধ্যায়ে লিখা হয়েছে। এ নীতিগুলোর অধিকাংশের সঙ্গেই আমরা একমত। এর খুব কম অংশ নিয়েই তর্ক করার আছে। কিন্তু যখনই আপনি মূলনীতি নিয়ে তর্ক শুরু করেন, তা মীমাংসা করা দুরূহ হয়ে পড়বে। আর যারা এখানকার মানুষদের বিভক্ত রেখে লুটপাট, পাচার, নিপীড়ন আর জবাবদিহিহীন ক্ষমতা বহাল রাখতে চায়, তারা লাভবান হবে। আমরা যা চাই, এ মূলনীতিগুলো কার্যকর করার পথে বিদ্যমান বাধাগুলো দূর করতে। আর এটা আমরা করতে চাই জনসমর্থনের ওপর ভর করে ‘সংবিধান সংস্কার সভা’র নির্বাচনের মাধ্যমে।

সমকাল: কিন্তু আমাদের সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়েই তো প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তুমুল বিতর্ক।

হাসনাত কাইয়ূম: সংবিধান যেদিন গৃহীত হয়, ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর, বঙ্গবন্ধু সেদিন গণপরিষদে একটি ভাষণ দিয়েছিলেন। সেখানে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বলতে তিনি কী বোঝেন, তা তুলে ধরেছিলেন। আমার মনে হয়, ওই বক্তৃতাটা ৭ মার্চের ভাষণের মতোই সংবিধানের ‘শিডিউল’ বা তপশিলে যুক্ত করা উচিত ছিল। তাহলে আপনি আজকে যে তর্কের কথা বলছেন, তা অনেকাংশে কমে যেত। এখানে ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে যে বিতর্ক তোলা হয়, তা গণতন্ত্রের সঙ্গে যায় না। একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে নিজ ধর্ম পালনের। এ কাজে কেউ তাকে বাধা দিতে পারে না। আবার কাউকে ধর্ম পালনে রাষ্ট্র বাধ্যও করতে পারে না। আমরা মনে করি, ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্কের নামে খুবই পরিকল্পিতভাবে এমন একটা অমীমাংসেয় পদ্ধতিতে ব্যক্তির একান্ত বিশ্বাস বিষয়ক তর্ককে সামনে আনা হয়, যাতে খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং অতি প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক তর্কগুলো সামনে আসতে না পারে।

সমকাল: আপনি জানেন, ৭২-এর সংবিধানে মূলনীতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিধায় ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এখন এমনও বলা হয়- ৯০ শতাংশেরও বেশি মুসলিম অধ্যুষিত দেশে ওই অনুচ্ছেদ চলবে না। সংখ্যাগুরুদের কিছুটা হলেও অগ্রাধিকার দিতে হবে।

হাসনাত কাইয়ূম: গণতন্ত্রে যদি কাউকে অগ্রাধিকার দিতে হয়, সেটা হলো দুর্বল বা সংখ্যালঘুর মৌলিক নাগরিক ভোগ করার অধিকার। গণতন্ত্রে সংখ্যাগুরুর পছন্দে সরকার গঠিত হয়। কিন্তু সে সরকার কাজ করে সংখ্যালঘুর মৌলিক নাগরিক অধিকার রক্ষা করার জন্য। সংখ্যাগুরুরা কেন অগ্রাধিকার পাবে? তাহলে তো গণতন্ত্র হলো না। কারা দেশ পরিচালনা করবে, তা ঠিক হয় সংখ্যাগুরুর মতের ভিত্তিতে। কিন্তু দেশ তো পরিচালিত হয় সংখ্যালঘুর, এমনকি একজন নাগরিকেরও অধিকার যাতে কেউ ক্ষুণ্ণ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য। সবচেয়ে দুর্বল মানুষের অধিকার যেখানে প্রতিষ্ঠা পাবে, সেটাই হলো গণতন্ত্র। সংখ্যায় যারা সবচেয়ে বেশি তারা তো এমনিতেই অনেক অধিকার ভোগ করে এবং তাদের অধিকারের ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকলে তারা তা সহজে অপসারণও করতে পারে।

সমকাল: তাহলে রাষ্ট্রধর্ম বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী?

হাসনাত কাইয়ূম: এটা তো খুব ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সংবিধানে ঢোকানো হয়েছিল জনগণের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার জন্য। রাষ্ট্রধর্ম বিল যিনি এনেছিলেন, তিনি ক্ষমতা দখল করেছিলেন অবৈধভাবে। তখন জামায়াতে ইসলামীসহ সব রাজনৈতিক দলই এ বিলের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল।

সমকাল: কিন্তু আজকে তো রাজনীতির মাঠে উল্লেখযোগ্য সব দলই এটাকে সমর্থন করছে।

হাসনাত কাইয়ূম: আমরা মনে করি, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক আন্দোলনকে বিভ্রান্ত এবং বিভক্ত করার জন্য এসব তর্ক সামনে আনা হয়। এ ধরনের বিতর্ক যখন চলে, তখন টাকা পাচার কেন হয়; মানুষকে গুম কেন করা হয়; সে ধরনের অতি জরুরি আলোচনা আড়াল করা সহজ হয়। এসব তর্ক শাসকশ্রেণির দলগুলো করে শাসন-শোষণ-নিপীড়ন টিকিয়ে রাখার স্বার্থে।

সমকাল: আপনারা তো সেই শাসকশ্রেণির একটা দলের সঙ্গেই ঐক্য করেছেন।

হাসনাত কাইয়ূম: দেখুন, আমরা যে সাতটা দল ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ তৈরি করেছি, তাদের প্রায় সবাই, আমাদের দল যেভাবে রাষ্ট্র সংস্কারের জায়গাটা ব্যাখ্যা করে, তার কাছাকাছিই আছে; প্রায় একমত। এটা একটা বড় অর্জন বলে আমরা মনে করি। সংস্কার কীভাবে হবে অর্থাৎ বাস্তবায়নের পথ-পদ্ধতি নিয়ে সামান্য কিছু পার্থক্য আছে। আর থাকাটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। সেখানে তখনই ঐক্য হবে, যখন আরও ব্যাপক মানুষকে এ প্রশ্নে আমাদের কাছাকাছি আনতে পারব। কিন্তু রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়টি তো আমাদের রাজনীতিতে নতুন; মাত্র আলোচনা শুরু হচ্ছে। আর বিএনপি তো এই প্রথম স্পষ্ট করে বলল- রাষ্ট্রের সংস্কার বা মেরামত প্রয়োজন।

সমকাল: বিএনপির রাষ্ট্র মেরামত এবং আপনাদের রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্যে মিল-অমিলগুলো কী?

হাসনাত কাইয়ূম: এ প্রশ্নে তারা যা যা বলেছে, সেগুলোর সঙ্গে আমাদের মিল আছে; অমিলও আছে। যেমন রাষ্ট্র মেরামত প্রশ্নে তারা যে বিষয়গুলোর কথা বলছে এবং যে পদ্ধতির কথা বলেছে; আর আমরা আগে থেকেই যে পদ্ধতির কথা বলছি, তা এক নয়। কিন্তু যেখানে এতদিন শাসকশ্রেণির দলগুলোর বক্তব্য এক দলকে সরিয়ে আরেক দলকে ক্ষমতায় বসানোর আলাপের মধ্যে ঘুরপাক খেত, সেখানে আজ বিএনপি বলছে- খোদ রাষ্ট্র্র ত্রুটিপূর্ণ। এই রাষ্ট্রের মেরামত করতে হবে। সর্বস্তরের জনগণের কাছে এ আলাপটা নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির এ অবস্থানকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে আমরা মনে করি। এটাই ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’-এর সঙ্গে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে শরিক হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের ভিত্তি বলতে পারেন।

সমকাল: বিএনপি বলছে, প্রথমত- বর্তমান সরকারের পতন চায় তারা; দ্বিতীয়ত একটা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে; তৃতীয়ত এ নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে তারা একটা জাতীয় সরকার গঠন করবে। আপনাদের অবস্থান কী- এ তিনটা বিষয়ে?

হাসনাত কাইয়ূম: সরকারের পদত্যাগ কিংবা অপসারণ প্রশ্নে আমরা সবাই একমত। তবে বিএনপি চায় তত্ত্বাধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন; সেখানে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ চায় সরকার পতনের পর আন্দোলনকারী সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তী সরকার। যে অন্তর্বর্তী সরকার দুটি কাজ করবে :একটি হলো সুষ্ঠু নির্বাচন; দ্বিতীয় চাওয়া হলো নির্বাচনের পাশাপাশি এ সরকার এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করবে, যাতে সংবিধান সংস্কারে সবাই একমত হয় এবং নির্বাচিতরা তা করতে বাধ্য থাকে। আর আমাদের দল চায় ওই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৯৭০ সালের মতো একটা নির্বাচন করবে; যে নির্বাচনে নির্বাচিতরা প্রথমে একটি ‘সংবিধান সংস্কার সভা’ হিসেবে গঠিত হবে। তারা প্রথমে সংবিধান সংস্কার করবে এবং এর পর তারা সংস্কারকৃত সংবিধানের আওতায় সরকারের দায়িত্ব পালন করবে, যাতে তারা আর ফ্যাসিবাদী না হয়ে উঠতে পারে।

সমকাল: আচ্ছা, আপনারা যে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ করেছেন, সেখানে তো এখনই নানা মতবিরোধ হতে দেখা যায়। এগুলো নিয়ে কতটুকু এগোতে পারবেন আপনারা?

হাসনাত কাইয়ূম: আপনি যাদের দিকে ইঙ্গিত করছেন, তারা আসলে বয়সে তরুণ; রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাও অল্প। আমরা চেষ্টা করছি ঐক্যকে ধরে রাখতে। বাকিটা তো এখনই বলা যায় না। মনে রাখতে হবে, এখানে সাতটা দল মানে কমপক্ষে সাতটা মত আছে। সুতরাং মাঝেমধ্যে মতভিন্নতা তৈরি হওয়াই স্ব্বাভাবিক।

সমকাল: অভিযোগ আছে- গণতন্ত্র মঞ্চে বামদের বিরোধিতার কারণে ইসলামপন্থি দলকে অন্তর্ভুক্ত করা যাচ্ছে না।

হাসনাত কাইয়ূম: যাঁরা এ অভিযোগ তুলেছেন; আমার জানামতে তাঁরা কখনোই মঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ধরনের কোনো প্রস্তাব উত্থাপন করেননি। আর ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ যে ধরনের কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে, সেগুলো তো বাম কর্মসূচি নয়, স্রেফ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কর্মসূচি। এসব কর্মসূচির ভিত্তিতে কোনো ইসলামপন্থি দল গণতন্ত্র মঞ্চে যোগ দিতে চেয়েছে, এমন আমার জানামতে ঘটেনি। ইসলামপন্থিরা নিজেরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছে, এমনও নয়। অভিযোগকে একটা চটকদার কথা ছাড়া আর কিছু মনে হচ্ছে না আমার কাছে।

সমকাল: আপনাকে ধন্যবাদ।
হাসনাত কাইয়ূম: সমকালকেও ধন্যবাদ।

প্রথম প্রকাশ: সমকাল, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
বৈপ্লবিক প্রক্রিয়া নয়, আমরা বলছি সংস্কারের কথা

 

বৈপ্লবিক প্রক্রিয়া নয়, আমরা বলছি সংস্কারের কথা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *