![](https://rashtrochinta.net/wp-content/uploads/2021/08/Desktop-size-85-1024x576.png)
- দারোন অ্যাসেমোগলু ও জেমস এ রবিনসন; ভাষান্তর: মোহাম্মদ আরিফ খান
অর্থনীতিবিদ দারোন অ্যাসেমোগলু ও জেমস এ রবিনসন রচিত ‘হোয়াই নেশনস ফেইল’ গ্রন্থটির অনুবাদ খুব শীঘ্রই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে চৈতন্য প্রকাশনী থেকে। গ্রন্থটির অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ আরিফ খান। বইয়ের ‘মুখবন্ধ’ অংশটা রাষ্ট্রচিন্তা ব্লগে উন্মুক্ত করা হলো। ‘মুখবন্ধ’-তে লেখকদ্বয়ের গ্রন্থ রচনার মূল লক্ষ্য এবং গ্রন্থের প্রধান বিষয়বস্তু ফুটে উঠেছে।
এই বইটি বিশ্বের ধনী দেশ যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি আর গরিব দেশ যেমন সাব-সাহারান আফ্রিকা, মধ্য আমেরিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার লোকদের আয় ও জীবন মানের মধ্যে যে-বিশাল ফারাক সেই বিষয়ে রচিত।
আমরা যখন এই মুখবন্ধ লিখছি তখন দক্ষিণ আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য ‘আরব বসন্তে’ প্রকম্পিত হচ্ছে, যার সূচনা তথাকথিত জেসমিন বিপ্লব-এর মাধ্যমে, যেটা ১৭ ডিসেম্বর ২০১০-এ রাস্তার ফুল বিক্রেতা মোহাম্মদ বোয়াজিজির আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে জনসাধারণকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। প্রেসিডেন্ট জাইন এল আবিদীন বেন আলী, যিনি ১৯৮৭ সাল থেকে তিউনিশিয়াকে শাসন করে আসছিলেন, ১৪ জানুয়ারি ২০১১ নাগাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন। কিন্তু নিভে যাওয়া তো দূরের কথা, তিউনিশিয়ার সুবিধাবঞ্চিত জনগণের মধ্যে অভিজাতদের শাসনের বিরুদ্ধে বিপ্লবের উত্তাপ বরং আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছিল, এবং সেটি ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। হোসনি মোবারক, যিনি প্রায় ত্রিশ বছর ধরে শক্ত হাতে মিশরের শাসনক্ষমতা আঁকড়ে ধরেছিলেন, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১১-তে তাকেও ক্ষমতাচ্যুত করা হলো। বাহরাইন, লিবিয়া, সিরিয়া ও ইয়েমেনের শাসকগোষ্ঠীর কপালে কী আছে, এই মুখবন্ধ রচনাকালে তা অজানাই রয়ে গেছে।
এই দেশগুলোতে অসন্তোষের শেকড় নিহিত আছে তাদের গরিবির মধ্যে। গড়ে একজন মিশরীয় নাগরিকের আয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিকের আয়ের মাত্র ১২ শতাংশ, এবং মিশরীয়রা আমেরিকানদের তুলনায় দশ বছর কম বেঁচে থাকার প্রত্যাশা রাখে। মিশরের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ ভয়াবহ গরিবি হালতে বাস করে। এই ফারাকগুলো গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর বিশ্বের অপরাপর দরিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে, যেমন উত্তর কোরিয়া, সিয়েরা লিওন ও জিম্বাবুয়ে, থাকা ফারাকের তুলনায় এই ফারাকগুলো আসলে খুবই সামান্য-যেসব দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ গরিবি হালতে বাস করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় মিশর কেন এত গরিব? কী সেই প্রতিবন্ধকতাগুলো যা মিশরীয়দের আরও সমৃদ্ধিশালী হতে বাধা প্রদান করে? মিশরের এই দারিদ্র্য কি অমোচনীয় নাকি এটাকে নির্মূল করা সম্ভব? এ-সম্পর্কে চিন্তাভাবনা শুরু করার একটা সহজাত উপায় হলো, মিশরীয়রা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে সে-সম্পর্কে তারা নিজেরাই কী বলছে এবং কেন তারা মোবারক সরকারের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছিল তা খতিয়ে দেখা। চব্বিশ বছর বয়সি নোহা হামেদ, কায়রোর একটা বিজ্ঞাপনী সংস্থার কর্মী, তাহরির স্কয়ারে অভ্যুত্থানের সময় তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছিলেন-‘আমরা দুর্নীতির শিকার এবং নিপীড়ন ও মানহীন শিক্ষার কারণে যন্ত্রণা পোহাচ্ছি। আমরা একটি দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবস্থার মধ্যে জীবনযাপন করছি, যেটাকে বদলাতে হবে।’ স্কয়ারের আরেকজন, বিশ বছর বয়সী ফার্মাসীর ছাত্র মোসাব এল সামি, একমত পোষণ করে বলেন-‘আমি আশা করি এই বছরের শেষের দিকে একটি নির্বাচিত সরকার পেয়ে যাব, সর্বজনীন স্বাধীনতার নীতি প্রযুক্ত হবে, আর দুর্নীতির যে-করাল থাবা আমাদের দেশটাকে গ্রাস করে রেখেছে তার অবসান হবে।’ তাহরির স্কয়ারের বিক্ষোভকারীরা তাদের সরকারের দুর্নীতি, জনগণের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অসমর্থতা এবং দেশের ভেতর সুযোগের সমতার অভাব সম্পর্কে এক সুরে কথা বলছিলেন। বিশেষত দমনপীড়ন ও রাজনৈতিক অধিকারের অনুপস্থিতি সম্পর্কে অভিযোগ তুলছিলেন তারা। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রাক্তন পরিচালক মোহাম্মদ এলবারাদি ১৩ জানুয়ারি ২০১১-এ এক টুইট বার্তায় যেমনটা লিখেছিলেন-‘তিউনিশিয়াঃ দমনপীড়ন + সামাজিক ন্যায়বিচারের অনুপস্থিতি + শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের পথগুলো অস্বীকার করা = একটি পিনখোলা বোমা।’ মিশরীয়রা ও তিউনিশীয়রা উভয়েই তাদের রাজনৈতিক অধিকারের অভাবকেই তাদের অর্থনৈতিক সমস্যার মূল কারণ হিশাবে দেখেছে। যখন প্রতিবাদকারীরা তাদের দাবিগুলোকে আরও সুশৃঙ্খলভাবে তৈরি করতে শুরু করেছিল তখন মিশরীয় বিক্ষোভ আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করা সফটওয়ার প্রকৌশলী ও ব্লগার ওয়ালি খলিল যে-বারোটি আশু দাবি পোস্ট করেছিলেন তার সব কটিই রাজনৈতিক পরিবর্তনের ওপর আলোকপাত করেছিল। ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি করার মতো ইস্যুগুলো কেবল অন্তর্বর্তীকালীন দাবির মধ্যে আবির্ভূত হয়েছিল, যা পরবর্তীতে বাস্তবায়িত করতে হবে।
![](https://rashtrochinta.net/wp-content/uploads/2021/08/GettyImages-108694153.0.0-1024x768.jpg)
মিশরীয়দের ক্ষেত্রে, যে-বিষয়গুলো তাদেরকে পিছে ফেলে রেখেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে একটি অকার্যকর ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্র, এবং এমন একটি সমাজ যেখানে তাদের প্রতিভা, উচ্চাকাক্সক্ষা, উদ্ভাবনী দক্ষতা ও যে-টুকু শিক্ষাই তার পায় তার কিছুই তারা ব্যবহার করতে পারে না। তবে এসব সমস্যার মূলে যে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে তা তারা চিহ্নিত করতে পেরেছে। যেসব অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন তারা হয়, মিশরের রাজনৈতিক ক্ষমতা যেভাবে একটা ছোট অভিজাত গোষ্ঠীর দ্বারা কুক্ষিগত ও চর্চিত হচ্ছে সেগুলো তার ফলেই উদ্ভূত হয়েছে। তারা বুঝতে পেরেছে সবার আগে এই ব্যাপারটা বদলাতে হবে।
তথাপি, এই বিশ্বাসটুকুর কারণে, তাহরির স্কয়ারের বিক্ষোভকারীরা এই বিষয়ে প্রচলিত প্রজ্ঞা থেকে ব্যাপকভাবে সরে গেছে। মিশরের মতো কোনো দেশ কেন গরিব – তার কারণগুলো নিয়ে যখন তাঁরা বাহাস করেন, তখন শিক্ষাবিদ আর ভাষ্যকাররা স¤পূর্ণ ভিন্ন কিছু কারণের উপর জোর দেন। কেউ কেউ বলেন মিশরের গরিবি হালতের মূলত এর ভূগোল দ্বারা নির্ধারিত হয়েছে। এটি দ্বারা বোঝানো হয় যে দেশটির বেশির ভাগ মরু অঞ্চল, রয়েছে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাব, এবং এর জমি ও জলবায়ু উৎপাদনশীল কৃষিকাজের জন্য উপযোগী নয়। অন্যরা এর পরিবর্তে মিশরীয়দের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যাবলির দিকে ইঙ্গিত করেন, যা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির বৈরী। তারা যুক্তি দেখান, যে-সকল বৈশিষ্ট্য অন্যদেরকে সমৃদ্ধিশালী করেছে, মিশরীয়দের তেমন কর্মনৈতিকতা ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের অভাব আছে। মিশরীয়রা সেসবের পরিবর্তে ইসলামি বিশ্বাসকে বেছে নিয়েছে, যা অর্থনৈতিক সাফল্যের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। অর্থনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারক পণ্ডিতদের মধ্যে প্রভাবশালী তৃতীয় একটি অ্যাপ্রোচ এই ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত যে, একটি দেশকে সমৃদ্ধ করার জন্য কী করা লাগে মিশরের শাসকরা তা জানেনই না, এবং অতীতে তারা ভুল সব নীতিকৌশল অবলম্বন করেছিলেন। এই শাসকরা যদি স্রেফ সঠিক উপদেষ্টাদের কাছ থেকে সঠিক পরামর্শটা পেতেন, এই চিন্তাধারা অনুসারে, তাহলে সমৃদ্ধি চলে আসত। যে ছোট অভিজাত গোষ্ঠী মিশরকে শাসন করে আসছিলেন, তারা যে সমাজকে নিঃস্ব করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছিলেন, দেশটির অর্থনৈতিক সমস্যা অনুধাবনে এই তথ্যটা যেন এসব শিক্ষাবিদ আর পণ্ডিতের কাছে অপ্রাসঙ্গিক।
এই বইটিতে আমরা এই দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরব যে, অধিকাংশ শিক্ষাবিদ আর ভাষ্যকাররা নন, তাহরির স্কয়ারে সমবেত মিশরীয়রাই সঠিক। বস্তুত, মিশর ঠিক এই কারণেই গরিব যে দেশটি একটা ছোট অভিজাত গোষ্ঠী দ্বারা শাসিত হয়ে আসছে যারা বিপুল অধিকাংশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে নিজেদের স্বার্থে সমাজকে সংগঠিত করেছে। রাজনৈতিক ক্ষমতাকে সংকীর্ণভাবে সংহত করা হয়েছে এবং যাদের হাতে এই ক্ষমতা আছে তাদের জন্য সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার কাজে এটিকে ব্যবহার করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, সেই ৭০ বিলিয়ন ডলারের কথা, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মোবারক আপাতদৃষ্টিতে যা পুঞ্জীভূত করেছিলেন। আখেরে মিশরের জনগণই যে ক্ষতিগ্রস্ত, এটা তারা ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন।
আমরা দেখাব যে, মিশরীয়দের গরিবী বিষয়ক এই ব্যাখ্যাটা, জনসাধারণের দেয়া ব্যাখ্যাটা, গরিব দেশগুলো কেন গরিব সেই বিষয়ে সাধারণভাবে প্রযোগ্য একটা ব্যাখ্যা। দেশটি উত্তর কোরিয়া, সিয়েরা লিওন বা জিম্বাবুয়ে যেই হোক না কেন, আমরা দেখাব দরিদ্র দেশগুলো ঠিক সেই কারণেই দরিদ্র, মিশর যে-কারণে দরিদ্র। গ্রেট ব্রিটেন আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো ধনী হয়ে উঠেছিল, কারণ তাদের নাগরিকরা ক্ষমতা কুক্ষিগত করা ছোট অভিজাত গোষ্ঠীকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে এমন একটি সমাজ তৈরি করতে পেরেছিলেন, যেখানে রাজনৈতিক অধিকারগুলোকে আরও বিস্তৃতভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছিল। যেখানে সরকার ছিল নাগরিকদের কাছে দায়বদ্ধ আর সাড়াপ্রদানকারী, এবং যেখানে অর্থনৈতিক সুযোগগুলো কাজে লাগানোর সামর্থ্য বিশাল জনগোষ্ঠীর ছিল। আমরা আরও দেখাব যে, আজকের বিশ্বে কেন এত বৈষম্য বিরাজ করছে তা বোঝার জন্য অতীতের গভীরে অনুসন্ধান চালাতে হবে এবং সামাজিক ইতিহাসের ধারাকে অধ্যয়ন করতে হবে। আমরা দেখব যে, ব্রিটেন মিশরের চেয়ে ধনী হওয়ার কোরণ হল, ১৬৮৮ সালে ব্রিটেনে (বা, যথাযথভাবে বললে, ইংল্যান্ডে) একটা বিপ্লব ঘটে গিয়েছিল, যেটি তাদের রাজনীতি ও জাতীয় অর্থনীতির আমূল রূপান্তর ঘটায়। জনগণ অধিকতর রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য লড়ছিল, এবং জয়ী হয়েছিল; আর তারা সেটাকে তাদের অর্থনৈতিক সুযোগগুলো সম্প্রসারিত করার কাজে লাগায়। ফল ছিল মৌলিকভাবে ভিন্ন একটা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পথরেখা, যা দেশটিকে শিল্প বিপ্লবের দিকে নিয়ে যায়।
![](https://rashtrochinta.net/wp-content/uploads/2021/08/ce16a6d98fe1430cef0e6a7067003d45_0-1024x683.jpg)
শিল্প বিপ্লব এবং এটা যে-প্রযুক্তিগুলোকে অবমুক্ত করেছিল সেগুলো মিশরে ছড়িয়ে পড়েনি, কেননা দেশটি অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীন ছিল। অটোমানরা দেশটিকে সেভাবেই বিবেচনা করত পরবর্তীতে মোবারক পরিবার যেমনভাবে করেছিল। ১৭৯৮ সালে নেপোলিয়ান বোনাপার্তে মিশরের অটোমান শাসন উৎখাত করেন, কিন্তু পরবর্তীতে দেশটি ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের কবলে চলে যায়। মিশরের সমৃদ্ধি ঘটানোয় অটোমানদের মত এই নতুন শাসকদেরও সামান্যই মাথাব্যথা ছিল। যদিও মিশরীয়রা অটোমান ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে তাড়াতে পেরেছিল, এবং ১৯৫২ সালে রাজতন্ত্রেও পতন ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল, এগুলো ১৬৮৮ সালে ইংল্যান্ডে সংঘটিত হওয়া বিপ্লবের মত কিছু ছিল না। মিশরের রাজনীতির আমূল রূপান্তর ঘটানোর পরিবর্তে এগুলো বরং আরেকদল অভিজাত গোষ্ঠীকে ক্ষমতায় এনেছিল। পূর্বের অটোমান আর ব্রিটিশ শাসকদের মত এই নব্য শাসকগোষ্ঠীও মিশরের জনসাধারণের সমৃদ্ধি অর্জনের ব্যাপার নির্লিপ্তই থেকে গেল। ফলে, সমাজেড় মৌলিক কাঠামোয় কোনো পরিবর্তন আসেনি, এবং মিশর যেই গরিব ছিল সেই গরিবই রয়ে গেছে।
এই বইটিতে আমরা অধ্যয়ন করব কীভাবে সময়ের সাথে এই নমুনাগুলো নিজেদেরকে পুনরুৎপাদিত করে, এবং কখনও কখনও সেগুলোতে রদবদল আসে, ১৬৮৮ সালে ইংল্যান্ডে এবং ১৭৮৯ সালে ফ্রান্সে বিপ্লবের সাথে যেমনটি এসেছিল। এটা আমাদেরকে বুঝতে সহায়তা করবে, মিশরের পরিস্থিতিতে পরিবর্তন এসেছে কিনা, এবং মোবারককে উৎখাত করা বিপ্লব সাধারণ মিশরীয়দের জীবনে সমৃদ্ধি আনতে সক্ষম এমন একগুচ্ছ নতুন প্রতিষ্ঠানের দিকে নিয়ে যাবে কিনা। অতীতেও মিশরে বিপ্লব হয়েছিল, কিন্তু তাতে বাঞ্চিত পরিবর্তন আসেনি। না আসার কারণ, যারা বিপ্লবগুলো সম্পন্ন করেছিলেন, তারা কেবল উৎখাত হওয়া শাসকদের কাছ থেকে নিয়ন্ত্রণটা নিজেদের হাতে নিয়ে একই ধরণের একটা ব্যবস্থা পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। সাধারণ নাগরিকদের পক্ষে বাস্তব রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করা, এবং সমাজ যেভাবে কাজ করে তাতে পরিবর্তন আনা, আসলেই খুব কঠিন কাজ। তবে এটা সম্ভব; এবং আমরা দেখব কীভাবে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, বতসোয়ানা ও ব্রাজিলে এটা সম্ভব হয়েছি। মূলত, একটা গরিব সমাজের ধনী হয়ে ওঠার জন্য এই ধরণের একটা রাজনৈতিক রূপান্তরকরণ প্রয়োজন। প্রমাণ আছে যে, মিশরে সম্ভবত সেটা ঘটছে। রেদ মেতওয়ালি, তাহরির স্কয়ারের আরেক প্রতিবাদী, যুক্তি তুলে ধরেন, ‘এই বিক্ষোভ সমাবেশে মুসলমান আর খ্রিষ্টানদেরকে, যুবক ও বৃদ্ধদেরকে একসাথে দেখতে পাচ্ছেন আপনি; সবাই আসলে একই জিনিস চাইছে।’ আমরা দেখব যে, সমাজে এত বিস্তৃত একটা আন্দোলন অন্য রাজনৈতিক রূপান্তরগুলোতে যা ঘটেছিল তার একটি মূল অংশ। আমরা যদি বুঝতে পারি কখন ও কেন এ-ধরনের পরিবর্তন সংঘটিত হয়; তাহলে কখন এমন আন্দোলনগুলো ব্যর্থ হবে বলে প্রত্যাশা করতে হবে, যেমনটা অতীতে প্রায়শই ঘটেছে, আর, কখন আমরা আশা করতে পারব যে এগুলো সফল হবে, ও বদলে দেবে লাখ মানুষের জীবন; সেই মূল্যায়নের জন্য অপেক্ষাকৃত ভালো একটা অবস্থানে থাকতে পারব আমরা।